ভূমিকা
আমরা
প্রথম
অংশে
দেখেছি
কিভাবে
অধর্ব্বেদ, বৃহদারণ্যক উপনিষদ,
ছান্দোগ্য উপনিষদ
এবং
তৈত্তিরীয় আরণ্যকে যে
'পুরাণ'
শব্দ
ব্যবহার হয়েছে,
তার
বর্তমান ১৮
পুরাণ
বা
উপপুরাণের সঙ্গে
কোন
সম্পর্ক নেই।
এখন
পর্যন্ত আমরা
যা
দেখেছি,
তার
একটি
সমীক্ষা করা
যাক।
সমীক্ষা
এখন পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করেছি, তার একটি সমীক্ষা করা যাক।
- অথর্ব্বেদাদি বেদে পুরাণ শব্দের প্রয়োগ
- পুরাণ শব্দটি জগতের প্রাথমিক অবস্থার বর্ণনা দিতে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন নাসদীয় সূক্ত ও পুরুষসূক্ত। এর প্রমাণ সায়ণ ভাষ্যে রয়েছে।
ইতিহাসপুরাণ শব্দের বিশ্লেষণ
অন্যান্য প্রমাণের মীমাংসা
আজ আমরা আরও অন্যান্য
প্রমাণের আলোচনা করবো, যেখানে পুরাণ শব্দটি দৃষ্টিগোচর হবে।
১. ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যের সূত্র ১/৩/৩৩ এ ইতিহাসপুরাণ শব্দ
আদি
শঙ্করাচার্যের ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যের সূত্র
১/৩/৩৩ এ
"ইতিহাসপুরাণাম্" শব্দের উল্লেখ
পাওয়া
যায়।
"ইতিহাসপুরাণমপি ব্যাখ্যাতেন মার্গেণ সংভবন্মন্ত্রার্থবাদমূলকত্বাত্ প্রভবতি.... তস্মাত্সমূলম্ ইতিহাসপুরাণম্।"
২. ইতিহাসপুরাণ শব্দের একবচন ব্যাখ্যা
এখানে "ইতিহাসপুরাণ" শব্দটি একবচনে ব্যবহৃত হয়েছে, পুরাণ শব্দ নয়।
- যদি ইতিহাস এবং পুরাণ আলাদা করে উল্লেখ করা হতো, তবে এটি দ্বিবচনে "ইতিহাসপুরাণে" হতো।
- আচার্য শঙ্কর একবচনে এর প্রয়োগ করেছেন, যা প্রমাণ করে এটি এক শব্দ, এবং এর অর্থ প্রাচীন ইতিহাস।
৩. শঙ্করাচার্যের ছান্দোগ্য উপনিষদ ভাষ্যে ইতিহাসপুরাণ
- ইতিহাসের বিশেষণ হিসেবে পুরাণ
- আচার্য শঙ্কর তাঁর ছান্দোগ্য উপনিষদের ভাষ্যে 'ইতিহাসপুরাণ' শব্দের অর্থ করেছেন "প্রাচীন ইতিহাস," এবং পুরাণ শব্দকে ইতিহাসের বিশেষণ হিসেবে স্বীকার করেছেন।
- প্রামাণ্যতার প্রশ্ন
- এই প্রস্তুত ভাষ্যের আলোকে প্রশ্ন ওঠে—প্রাচীন ইতিহাসকে প্রামাণ্য হিসেবে গণ্য করা উচিৎ কি না।
৪. মহর্ষি মনুর স্মৃতি ও প্রমাণ
- মহর্ষি মনুর স্মৃতি
- মহর্ষি মনুও তাঁর স্মৃতিতে আপ্তজনের আচরণকে প্রমাণ মনে করেছেন এবং একে ধর্মের স্রোত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৫. পতঞ্জলির মহাভাষ্যের পস্পশাহ্নিক ১/১/১ এ পুরাণ শব্দের উল্লেখ
মহর্ষি
পতঞ্জলি তাঁর
মহাভাষ্যের পস্পশাহ্নিক ১/১/১ তে
পুরাণ
শব্দটি
ব্যবহার করেছেন। এখানে
উল্লেখ
করা
হয়েছে:
"সপ্তদ্বীপা বসুমতি,
ত্রয়ো
লোকাঃ
চত্বারো বেদাঃ
সাঙ্গাঃ সরহস্যা বহুধা
ভিন্না
একশতমধ্বর্য়ুশাখাঃ, সহস্রর্বত্মা সামবেদঃ, একবিংশতিধা বাহ্বৃচ্যম্, নবধাऽऽথর্বণো বেদঃ,
বাকোবাক্যমিতিহাস পুরাণম্ বৈদ্যকমিতি..."
৬. বৈদিক সাহিত্যের প্রসঙ্গ
এখানে মহর্ষি পতঞ্জলি বৈদিক সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং চার বেদ ও তাদের বিভিন্ন শাখার বর্ণনা দিয়েছেন।
- ব্রাহ্মণ গ্রন্থের প্রতিনিধিত্ব
- পুরাণ শব্দটি এখানে যে বৈদিক সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থকে নির্দেশ করছে, তা স্পষ্ট।
৭. অষ্টাদশ পুরাণের উল্লেখ নেই
পতঞ্জলি এখানে
অষ্টাদশ পুরাণের কথা
উল্লেখ
করেননি। বরং,
তিনি
ব্রাহ্মণ গ্রন্থ
এবং
বৈদিক
সাহিত্যের অন্যান্য অংশের
উপর
জোর
দিয়েছেন।
উপসংহার
এই সমস্ত প্রমাণ থেকে স্পষ্ট হয় যে, আচার্য শঙ্কর এখানে পুরাণের পরিবর্তে প্রাচীন ইতিহাসের কথা বলেছেন। শঙ্কর ভাষ্য থেকে পুরাণের শাস্ত্রমূলকতা সঠিকভাবে প্রমাণিত হয় না। পতঞ্জলির মহাভাষ্যে অষ্টাদশ পুরাণের কোন স্বীকৃতি নেই। প্রাচীন সাহিত্যে অষ্টাদশ পুরাণের মান্যতা পাওয়া যায় না। বাঁকি অংশ ৩ পর্বে আলোচনা করা হবে।
